সোলায়মান খান রানা
শরীয়তপুর প্রতিনিধি;
শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা কবরের ওপর কাঠ জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান খান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তিনি ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে নিজ বসতঘরের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুর প্রায় ১৫ বছর পর সোমবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা কবরের ওপর কাঠ জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রকাশ্যে আসে। প্রতিদিনের মতো সকালে স্বামীর কবর জিয়ারতে গিয়ে আগুন দেওয়ার চিহ্ন দেখতে পান মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাহফুজা বেগম। এতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসেন।
খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের ধারণা, দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার উদ্দেশ্যেই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে আফরোজা আক্তার বলেন, মহান বিজয় দিবস একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য গর্বের দিন। অথচ এই দিনে একজন মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার মতো ঘৃণিত কাজ আর কিছু হতে পারে না। এটি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। আমরা দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুর রহমান টিটু বলেন, আমরা কখনোই কবরে আগুন দেওয়ার মতো নেক্কারজনক ঘটনা দেখিনি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়া পুরো দেশবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সিকদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।
ঘটনার পর পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহআলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এমন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
JomunaTV